বাংলাদেশ আমাদের জন্মভূমি। এর আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। বাংলাদেশের মোট আয়তনের শতকরা ৪ ভাগ জমিও আমাদের মা ও বোনেদের নামে নেই। ভাইদের
অনীহা, স্বামীর চাপ, জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার জন্য
দেশের শতকরা ৩৬ জন নারী অনিচ্ছা স্বত্বেও সামান্য অর্থের বিনিময়ে উত্তরাধিকার
সুত্রে প্রাপ্ত জমির অধিকার ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
সরকারের আইনে নারীদের কে উত্তরাধিকার সম্পত্তির প্রাপ্ত অংশ বুঝিয়ে দিতে
বলা হয়েছে- "মৃত ব্যক্তির সম্পদ হতে তার
অন্তেষ্টেক্রিয়া খরচ,তার ঋন থাকলে পরিশোধ,স্ত্রীর অপরিশোধিত দেনমোহর প্রদান
সম্পন্ন করতে হবে। বাকি সম্পদের সর্ব্বোচ্চ ১/৩ অংশ তার উইলে (যদি থাকে)
ব্যয় হবে। এসব কাজ শেষে যে স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি থাকবে তা ইসলামি আইন
অনুসারে উত্তরাধিকারি গণের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।"
বাংলাদেশে আমরা বোনেদের সাথে যা যা করি-
- পিতার মৃত্যুর পর পুত্ররা ই পিতার সকল সম্পত্তির দখল ও ভোগ করতে থাকি।
- "লোকে কি বলবে" এই ভেবে বোন লজ্জায় পিতার সম্পত্তির কথা মুখেই নিতে পারে না।
- যখন বোনদের বয়স শেষের দিকে তখন স্বল্প টাকার বিনিময়ে ভাইপোদের নামে সম্পত্তি লিখে দিতে বাধ্য করি।
- অনেক সময় নিজেদেরকে অসহায় দেখিয়ে বিনা টাকায়ও বোনের অংশ নিজের নামে করে নেই।
- অনেক সময় বোনেদের খোজ খবর থাকে না। বোনদের সম্পত্তি আমরাই ভোগ করতে থাকি বিনা দলিলে।
- আমাদের দেশে খুব কম ক্ষেত্রেই ভাই তার বোনের অংশ বুঝিয়ে দেই।
পবিত্র কুরআন |
যাই হোক আইনকে তো আমরা ভয় পাই না। সকলে আল্লাহকে তো ভয় পান। আল্লাহর হাত থেকে আমরা
এতো সহজে বাঁচতে পারবো? তিনি আমাদের ঠিকই পাকড়াও করবেন।
পবিত্র
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ "আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে
নির্দেশ দিচ্ছেন, এক ছেলের জন্য দুই মেয়ের অংশের সমপরিমাণ। তবে যদি তারা
দুইয়ের অধিক মেয়ে হয়, তাহলে তাদের জন্য হবে, যা সে রেখে গেছে তার তিন
ভাগের দুই ভাগ; আর যদি একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য অর্ধেক। আর তার মাতা
পিতা উভয়ের প্রত্যেকের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ সে যা রেখে গেছে তা থেকে,
যদি তার সন্তান থাকে। আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং তার ওয়ারিস হয় তার
মাতা পিতা তখন তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। আর যদি তার ভাই-বোন থাকে
তবে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। অসিয়ত পালনের পর, যা দ্বারা সে
অসিয়ত করেছে অথবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের মাতা পিতা ও তোমাদের
সন্তান-সন্ততিদের মধ্য থেকে তোমাদের উপকারে কে অধিক নিকটবর্তী তা তোমরা জান
না। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।"
সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১১।
আইনের কথা বাদ দিলাম মহান আল্লাহর এই
আয়াত কে আমরা মানছি? না আমরা মানছি না। আমরা কিসের ভিত্তিতে নিজেদের কে মুসলমান দাবি করি? আমাদের মধ্যে ও পশুর মধ্যে কি আদৌ কোনো পার্থক্য আছে? পশু তো অনেক ভালো তার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই ভক্ষণ করে। অন্যদিকে আমরা নিজের
থাকতেও আরেকজনের অংশ ভক্ষণ করি।
আদৌ কি আমরা আমরা আমাদের বোনেদের সম্পত্তি বুঝিয়ে দিয়েছি? না
নিজেরাই তা ভক্ষণ করে যাচ্ছি। সময় এসেছে এখন দিনবদলের। আমাদের সকলেরই উচিত পিতার মৃত্যুর পর পর ই বোনেদের সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়া। আমরা সকলেই যেন নিজ
নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের মা ও বোনেদের সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে পারি। আল্লাহ
আমাদের সকলের মনের শক্তি বাড়িয়ে দিক।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন